হানি নাট (Honey Nut) হলো মিষ্টি স্বাদের ভাজা বাদামজাতীয় স্ন্যাক্স, যেটি সাধারণত চিনির সিরাপ, মধু ও কিছু তেল দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। এটি খেতে সুস্বাদু হলেও অতিরিক্ত খেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে হানি নাটের উপকারিতা ও সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো
![]() |
| কতটুকু স্বাস্থ্যকর হানি নাট |
তবে, সব খাবার সবার জন্য উপযোগী নয়, তেমনি হানি নাটও সবার জন্য নয়। বিক্রেতারা হানি নাটের বিজ্ঞাপনে বলে থাকেন যে, এটি যৌন দুর্বলতা থেকে মুক্তি দেবে। তবে, পুষ্টিবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে হানি নাটে এমন কোনো বিশেষ উপাদান নেই, যা যৌন দুর্বলতা দূর করবে। তাই যদি কেউ শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে দিনের পর দিন হানি নাট খেতে থাকে, তবে তার সমস্যা আরও জটিল হতে পারে।চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন এর মতামত অনুযায়ী, আসুন জেনে নেই কারা হানি নাট খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য:
মধু খাওয়া ডায়াবেটিসের চিকিৎসার জন্য একটি উত্তম পদ্ধতি নয়। মধুতে থাকা গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ রক্তে চার্জ করে, যা ডায়াবেটিসের প্রতিষেধ করে নেওয়া উচিত। এই রোগের সাথে সংযুক্ত অন্যান্য জটিলতা, যেমন রেটিনোপ্যাথি, নিউরোপ্যাথি, ন্যাফ্রোপ্যাথি ইত্যাদি, এর ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
ওজন বাড়তে চাইলে:
যারা ওজন বাড়তে চায় তাদের জন্য হানি নাট খাবার সুপারিশ করা হয় না। মধু অধিক শর্করা থাকে এবং এর গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স বেশি, যা তাদের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। বেশি বাদাম খাওয়া বাড়তি ক্যালোরি আপনার শরীরে সংগ্রহ করে, যা আরো ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
কিডনি রোগীদের জন্য:
কিডনি রোগীদের জন্য প্রোটিনের পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন খাবার খাওয়া উচিত নয়। এই কারণে কিডনি রোগীদের হানি নাট খাওয়া প্রতিষেধিত করা হয়। বাদামের খাবারে থাকা ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়ে, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে কিডনি সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যাগুলি, যেমন পা ফুলে যাওয়া, শরীরের শুল্কানো, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি বাড়তে পারে।
হানি নাটের পুষ্টিগুণ
১. শক্তির উৎস: হানি নাটে থাকে ভালো মানের ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি যোগায়।
২. ভিটামিন ও খনিজ: এতে ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক ও আয়রনের মতো উপাদান থাকে যা ত্বক, হাড় ও রক্তের জন্য উপকারী।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে মুক্ত মৌল থেকে রক্ষা করে, যা বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে।
যতটুকু খাওয়া স্বাস্থ্যকর
-
প্রতিদিন এক মুঠো (২০–৩০ গ্রাম) হানি নাট যথেষ্ট।
-
এটি বিকেলের নাস্তা বা সকালের খাবারের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।
-
অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে, কারণ এতে চিনি ও তেলের পরিমাণ বেশি।
সতর্কতা
১. ডায়াবেটিক রোগীরা হানি নাট খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, কারণ এতে থাকা চিনি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়াতে পারে।
২. বাজারের তৈরি হানি নাটে প্রিজারভেটিভ ও কৃত্রিম স্বাদ থাকতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর।
৩. বাড়িতে তৈরি হানি নাট সবচেয়ে নিরাপদ — প্রাকৃতিক মধু ও সামান্য ভাজা বাদাম ব্যবহার করে তৈরি করলে এটি আরও স্বাস্থ্যকর হয়।
উপসংহার:
হানি নাট একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু স্ন্যাকস, তবে পরিমাণে সংযম জরুরি। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে খেলে এটি শক্তি, পুষ্টি ও মন ভালো রাখে, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
