তেঁতুল একধরনের টক ফল। এটি বসন্তকালের ফল হলেও সারা বছরে পাওয়া যায়। এই ফলটির প্রচন্ড টক স্বাদে অনেকেরই প্রিয় খাবার। তেঁতুলে অনেক ভেষজ ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। এটি পরিপাকবর্ধন এবং রুচিকারক ফল।
![]() |
| তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা |
তেঁতুলের আয়রন অন্য ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুণ বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা তেঁতুলে মোট খনিজ পদার্থ ২.৯ গ্রাম, খাদ্য-শক্তি ২৮৩ কিলোক্যালোরি, আমিষ ৩.১ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ৬৬.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৭০ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১০.৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম এবং ভিটামিন সি ৩ মিলিগ্রাম। এগুলো বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে খুব উপকারী।
তেঁতুলের উপকারিতা:
তেঁতুলে টার্টারিক এসিড, ম্যালিক এসিড, এবং পটাশিয়াম রয়েছে, যা কোষ্ঠন্যকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া, পেটের ব্যথা সারাতে তেঁতুল গাছের ছাল এবং শিকড় ব্যবহার করা হয়। তেঁতুলে অনেক ফাইবার এবং আঁশ থাকে, যা খিদে কমাতে সাহায্য করে। এটিতে ফ্ল্যাভরনয়েড উপাদান বিদ্যমান, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। তেঁতুলে রয়েছে এক ধরনের এনজাইম, যা রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে তেঁতুলের বীজের ভুমিকা অপরিসীম। তেঁতুলে লিভার বা যকৃতকেও সুস্থ রাখে এবং নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্থ লিভার বা যকৃত অনেকটা সেরে উঠে।নিচে তেঁতুল খাওয়ার প্রধান উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো—
১. হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
তেঁতুলে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যাসিড ও ফাইবার যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। এটি পাকস্থলীতে হজম এনজাইম সক্রিয় করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
তেঁতুলের পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড যৌগ রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৩. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
তেঁতুলে থাকা বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, যেমন থায়ামিন ও নিয়াসিন, স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
৪. দেহের টক্সিন বের করে
তেঁতুলে প্রাকৃতিক ডিটক্সিফাইং গুণ রয়েছে, যা যকৃত ও কিডনি পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ, চর্বি ও বর্জ্য পদার্থ বের করতে সহায়ক।
৫. জ্বর ও প্রদাহ কমায়
তেঁতুলে থাকা অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমায় এবং জ্বরের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
৬. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
তেঁতুলে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে সংক্রমণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
৭. দাঁত ও মাড়ির যত্নে সহায়ক
তেঁতুলের হালকা অম্লীয় গুণ মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে সাহায্য করে, ফলে দাঁত ও মাড়ির সমস্যা কমে।
৮. ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী
তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে এবং চুলের গোড়া মজবুত করে। এটি প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
সতর্কতা
অতিরিক্ত তেঁতুল খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে পারে এবং পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
