গর্ভধারণ প্রতিটি মায়ের জীবনে একটি বিশেষ সময়। এই সময়টা শারীরিক এবং মানসিকভাবে সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য এবং তার গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে কিছু করণীয় বিষয় মেনে চলা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভবতী মায়ের যত্নে কী কী করণীয়।
![]() |
গর্ভবতী মায়ের যত্নে যা করণীয় |
১. সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করুন
গর্ভবতী মায়ের জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। গর্ভধারণের সময় মায়ের শরীরে প্রচুর পুষ্টির প্রয়োজন হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম, মাংস এবং বাদাম অন্তর্ভুক্ত করুন। পর্যাপ্ত প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং আয়রনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে এই খাবারগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ের প্রাথমিক, মধ্য এবং শেষ পর্যায়ে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আল্ট্রাসাউন্ড এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলি সময়মতো করানো উচিত যাতে গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
গর্ভবতী মায়ের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি। রাতে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করুন এবং দিনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে মায়ের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৪. হালকা ব্যায়াম করুন
হালকা ব্যায়াম গর্ভবতী মায়ের শরীরকে সুস্থ এবং সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। হাঁটা, যোগব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। তবে যেকোনো ধরনের ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন
গর্ভধারণের সময় মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটান, ভালো বই পড়ুন এবং পছন্দের কাজগুলি করুন যা মানসিক শান্তি আনে। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
৬. ধূমপান এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
গর্ভাবস্থায় ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি শিশুর বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য ধূমপান এবং অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা উচিত।
৭. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
গর্ভধারণের সময় শরীরের পানির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা প্রতিরোধ করে।
৮. মেডিক্যাল ইমারজেন্সির ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন
গর্ভাবস্থায় যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে তা অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। রক্তপাত, তীব্র পেট ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। গর্ভাবস্থার ত্রৈমাসিকভিত্তিক যত্নের নির্দেশনা নিচে দেওয়া হলো:
প্রথম ত্রৈমাসিক (১–৩ মাস)
-
সঠিক খাদ্য শুরু: ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট শুরু করা জরুরি।
-
বমি ও বমিভাব নিয়ন্ত্রণ: একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাবার খাওয়া।
-
অতিরিক্ত বিশ্রাম: ক্লান্তি বেশি হয়, তাই যথেষ্ট ঘুম জরুরি।
-
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় এড়ানো: ধূমপান, অ্যালকোহল, কাঁচা মাংস বা অতিরিক্ত কফি এড়ানো উচিত।
-
চিকিৎসকের পরামর্শ: প্রথম প্রেগন্যান্সি চেকআপ ও প্রয়োজনীয় টেস্ট করা।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (৪–৬ মাস)
-
পুষ্টি বাড়ানো: প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া।
-
হালকা ব্যায়াম: নিয়মিত হেঁটে শরীর সক্রিয় রাখা।
-
রক্ত ও ওজন পরীক্ষা: মাসে একবার চেকআপ চালিয়ে যাওয়া।
-
ত্বক ও শরীরের যত্ন: হালকা ম্যাসাজ বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের টান কম হয়।
-
মানসিক শান্তি: সঙ্গীত শোনা বা প্রিয় কাজ করলে মানসিক চাপ কমে।
তৃতীয় ত্রৈমাসিক (৭–৯ মাস)
-
বেশি বিশ্রাম: শরীরে ক্লান্তি ও ফোলাভাব বাড়ে, তাই পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।
-
হালকা হাঁটাহাঁটি: রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
-
হাসপাতাল প্রস্তুতি: প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা।
-
ঝুঁকির লক্ষণ লক্ষ্য করা: উচ্চ রক্তচাপ, প্রচণ্ড পেট ব্যথা, রক্তপাত বা শিশুর নড়াচড়া কম হলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া।
-
ডাক্তারের নিয়মিত পরামর্শ: প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের কাছাকাছি সময়ে আরও ঘন ঘন চেকআপ করা।
গর্ভবতী মায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া শুধু তার নিজের নয়, বরং গর্ভের শিশুরও সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। তাই উপরের করণীয়গুলি মেনে চলুন এবং সুস্থ একটি গর্ভকালীন সময় উপভোগ করুন।