বর্তমান ব্যস্ত জীবনে অনেকেই অফিসে গিয়ে বাইরের খাবারের ওপর নির্ভর করেন। সময়ের অভাব, রান্নার ঝামেলা বা ক্লান্তির কারণে এটা অনেকের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নিয়মিত বাইরে খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়, তেমনি খরচও অনেক বেড়ে যায়। তাই অফিসে নিজের রান্না করা খাবার নিয়ে যাওয়া শুধু স্বাস্থ্যকর নয়, এটি অর্থসাশ্রয়ী ও দায়িত্বশীল অভ্যাসও বটে।
অফিসে খাবার নিয়ে যান? জানুন কেন এটা ভালো অভ্যাস
কিন্তু একটু অসচেতন থাকলে সকালে টিফিন ক্যারিয়ারে নেওয়া খাবার দুপুর হতেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বাইরে খাবার নিতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চললে খাবার টাটকা থাকবে। এতে খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টিমান বজায় থাকবে।
১. স্বাস্থ্য থাকবে সুরক্ষিত
বাইরের খাবারে তেল, মসলা ও সংরক্ষক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এতে হজমের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, গ্যাস্ট্রিক, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে হার্টের সমস্যাও হতে পারে। নিজের তৈরি খাবার হলে আপনি জানেন কী পরিমাণ তেল, লবণ ও উপাদান ব্যবহার হচ্ছে—ফলে শরীর থাকে নিরাপদ।
২. খরচে সাশ্রয়
প্রতিদিন রেস্টুরেন্ট বা ক্যাফে থেকে লাঞ্চ কিনলে মাস শেষে অনেক টাকা খরচ হয়। ঘরে রান্না করা খাবার নিয়ে গেলে খরচ অনেক কমে যায়। এতে সঞ্চয়ের অভ্যাসও তৈরি হয়।
৩. পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবার
নিজে খাবার তৈরি করলে সহজেই পুষ্টির ভারসাম্য রাখা যায়। ভাত–সবজি, প্রোটিন (মাছ, মাংস, ডিম, ডাল), এবং সালাদ বা ফল রাখলে একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার হয়ে ওঠে। এতে কাজের সময় শক্তি ও মনোযোগ দুটোই বজায় থাকে।
৪. সময় বাঁচায়
অফিসের কাছাকাছি কোথাও লাঞ্চ খেতে যাওয়া, খাবার অর্ডার দেওয়া ও অপেক্ষা করতে অনেক সময় লাগে। নিজের খাবার সঙ্গে থাকলে সেই সময়টা বিশ্রাম, বই পড়া বা হালকা হাঁটায় ব্যবহার করতে পারেন।
৫. স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের দৃষ্টান্ত
অফিসে নিজে রান্না করা খাবার নিয়ে গেলে সহকর্মীরাও অনুপ্রাণিত হতে পারেন। এতে সবার মাঝে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যা দীর্ঘমেয়াদে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নত করে।
৬. মানসিক প্রশান্তি
ঘরে বানানো খাবার মানেই একধরনের ভালো লাগা—পরিবারের যত্ন ও ভালোবাসা মিশে থাকে তাতে। অফিসে নিজের খাবার খেলে মনও ভালো থাকে, কাজের আগ্রহ বাড়ে।
দূরের ভ্রমণের সময়ও আমাদের খাবার নিতে হয় সাথে। সেসময়ও মানতে পারেন এসব টিপস:
১. অফিসে খাবার নেবার জন্য ছোট একটি হটপট কিনে নিতে পারেন। এতে খাবার অনেকক্ষণ ভালো থাকবে এবং কিছুক্ষণ পর খেলেও গরম ভাবটা পাবেন।
২. কখনোই গরম খাবার বাক্সে নেওয়া যাবে না, এতে খাবার গন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে তাড়াহুড়োয় বের হওয়ার সময় অনেকেরই সময় থাকে না খাবার ঠান্ডা করার। সেক্ষেত্রে গন্তব্যে যাওয়ার পর খাবারের বাক্সটা একটু খুলে রাখতে হবে, যাতে গরম ভাপ বের হয়ে যায়। তাহলে খাবার ভালো থাকবে।
৩. ঠান্ডা করা খাবার অফিসে নিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সুবিধা থাকলে সেখানে গরম করে নিতে পারেন। এতে করে খাবারের স্বাদ বজায় থাকবে।
৪. টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে কোনো খাবার না নেওয়ার চেষ্টা করুন। টিস্যুতে মুড়িয়ে নিলে খাবারে আঠালো ভাব চলে আসে।
৫. চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোল ইত্যাদি খাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়িয়ে নিতে পারেন। এতে খাবার দীর্ঘক্ষণ ভালো থাকবে।
৬. ঠান্ডা জাতীয় কোনো খাবার বাইরে নিতে হলে অবশ্যই কোল্ডপটে নিবেন। এতে বেশি সময় পর্যন্ত ঠান্ডা রাখতে পারবেন।
৭. ভ্রমণে শুকনো খাবার নেওয়াটাই ভালো। অনেকক্ষণ খাবার ভালো থাকে। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে ছিদ্র করে তাতে খাবার মুড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। এতে খাবার নষ্ট হবে না।
উপসংহার
অফিসে নিজের রান্না করা খাবার নিয়ে যাওয়া মানে শুধু স্বাস্থ্য রক্ষা নয়, বরং সচেতন ও সাশ্রয়ী জীবনযাপন। প্রতিদিনের ছোট্ট এই অভ্যাস আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ, কর্মক্ষম ও মানসিকভাবে প্রশান্ত রাখবে। তাই কাল থেকেই শুরু করুন—নিজের খাবার নিজেই নিয়ে যান অফিসে!