একদিনে ঘুরতে পারেন মহাস্থানগড়ের যেসব দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মহাস্থানগড় বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব মেলবন্ধন এখানে দেখা যায়। একদিন সময় নিয়ে চাইলে আপনি ঘুরে দেখতে পারেন মহাস্থানগড়ের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান।
![]() |
একদিনে ঘুরতে পারেন মহাস্থানগড়ের যেসব দর্শনীয় স্থান
১. মহাস্থানগড় দুর্গনগর
প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল এই দুর্গনগর। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে মোর্য সম্রাট অশোকের সময়কাল থেকে এর ইতিহাস শুরু। চারদিকে প্রাচীরবেষ্টিত এই শহরেই ছিল রাজপ্রাসাদ, প্রশাসনিক ভবন ও মন্দির।
২. মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর
![]() |
মহাস্থান প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর
মহাস্থানগড় প্রবেশপথেই অবস্থিত এই জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে প্রাচীনপাথরের ফলক, মুদ্রা, মৃৎপাত্র, অস্ত্র, ভাস্কর্যসহ বহু প্রত্নবস্তু। এখানে ঘুরলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন বাংলার প্রাচীন সভ্যতা কতটা উন্নত ছিল।
৩. গোবিন্দভিটা
মহাস্থান দুর্গের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত গোবিন্দভিটা একটি মন্দিরনগরীর ধ্বংসাবশেষ। ধারণা করা হয় এটি ছিল দেবতা গোবিন্দের মন্দির। খননকাজে এখানে বহু প্রাচীন ইট ও মূর্তি পাওয়া গেছে।
৪. পরশুরাম প্রাসাদ
জনশ্রুতি আছে, এই স্থানে একসময় পরশুরাম নামক রাজা বাস করতেন। প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের চারপাশে এখনও দেখা যায় প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন।
৫. মান্দারভিটা ও খোদারপাথর ভিটা
এ দুটি স্থান মহাস্থানগড়ের আশেপাশে অবস্থিত প্রত্নস্থল, যেখানে পাওয়া গেছে প্রাচীন মন্দিরের ইটের গঠন ও ভাস্কর্য। ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এটি দারুণ একটি জায়গা।
৬. মেহেন্দীর ভিটা
এটি মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। খননকাজে এখানে প্রাচীন রাজপ্রাসাদের অংশবিশেষ ও ইটের তৈরি স্থাপনা পাওয়া গেছে।
৭. শাহ সুলতান বলখী (মাহিসওয়ার) মাজার
মহাস্থানগড়ের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত এই মাজারটি মুসলিম পর্যটকদের জন্য একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান। জনশ্রুতি আছে, শাহ সুলতান বলখী আফগানিস্তান থেকে এসে এখানে ইসলাম প্রচার করেছিলেন।
৮. করতোয়া নদী তীর
দুর্গনগরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। নদীর ধারে বসে সূর্যাস্ত দেখা মহাস্থান ভ্রমণের অন্যতম আনন্দ। ৯.গোকুল মেধ বা বেহুলার বাসর ঘর
মহাস্থানগড়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান হলো গোকুল মেধ। স্থানীয়ভাবে এটাকে বেহুলার বাসর ঘর বলে। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে এটিকে একটি বৌদ্ধ মঠ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবার কিছু ঐতিহাসিক গ্রন্থে এটিকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানীকে বাইরের শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য নির্মিত হয়েছিল।
![]() |
গোকুল মেধ বা বেহুলার বাসর ঘর |
এতে ১৭২টি ত্রিকোণ কক্ষ রয়েছে, যার এলোমেলো নির্মাণশৈলী এর রহস্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এটি বাসর ঘর না হলেও এর পশ্চিম অংশে বাসর ঘরের প্রবাদসংক্রান্ত স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। এর পূর্ব অংশে রয়েছে ২৪ কোণা বিশিষ্ট চৌবাচ্চার মতো একটি স্নানাগার, যার মধ্যে ৮ ফুট গভীর একটি কূপ ছিল। মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড থেকে এর দুরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। জনপ্রতি ৩০ টাকা আটোরিকশা ভাড়ায় যাওয়া যায় এখানে। এ ছাড়াও এক থেকে দেড়শো টাকায় অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়েও যাওয়া যায়। তবে বগুড়া থেকে মহাস্থানগড়ে আসলে সবার আগে এই দর্শনীয় স্থানটি পড়বে।
কিভাবে যাবেন
বগুড়া শহর থেকে মহাস্থানগড়ের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। বাস, অটো বা সিএনজি ভাড়া করে সহজেই যাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
মহাস্থানগড়ের আশেপাশে স্থানীয় কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে পাবেন দেশীয় খাবারের স্বাদ। চাইলে বগুড়া শহরে ফিরে বিখ্যাত বগুড়ার দই খেতে পারেন। যেখানে থাকবেন
মহাস্থানগড়ে থাকার মতো তেমন ভালো হোটেল নেই। ৩০ মিনিট দূরত্বে বগুড়ায় থাকতে পারবেন হোটেল মম ইন (ফাইভ স্টার মানের), হোটেল নাজ গার্ডেন (ফোর স্টার মানের), পর্যটন মোটেল (বনানী মোড়ে), নর্থওয়ে মোটেল (কলোনী বাজার) ইত্যাদি জায়গায়। এগুলো প্রত্যেকটাই শহরের নিরিবিলি পরিবেশে। এসব হোটেলে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকায় থাকা যায়।
ভ্রমণ টিপস
সকালে তাড়াতাড়ি বের হলে একদিনেই সব স্থান ঘোরা সম্ভব।
-
জাদুঘর ও দুর্গপ্রাচীর ঘোরার জন্য ৩–৪ ঘণ্টা সময় রাখুন।
-
গরমের সময় ছাতা ও পানির বোতল নিতে ভুলবেন না।
উপসংহার:
ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির এক অনন্য মিলনস্থল মহাস্থানগড়। একদিনের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণেই আপনি ফিরে পাবেন বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের ছোঁয়া।